কাজী নজরুল ইসলাম
 
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুব সমাজের অভিনন্দনের উত্তরে তাদের উদ্দেশ্যে কাজী নজরুল ইসলাম যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তারই পরিমার্জিত লিখিত রূপ। (ভাষণের এ ধরনের লিখিত রূপকে/ এ ধরনের রচনাকে বলা হয় অভিভাষণ।)
 
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উদ্ধৃতি
উল্লেখ আছে- বক্তিয়ার খিলজি, লক্ষণ সেন, কালাপাহাড়, কামাল পাশা, করিম, মুসোলিনি, সানইয়াৎ সেন, লেনিন
 
পদ্মা-ভাগীরথীর মত খরস্রোতা যাঁহাদের বাণী, আমি তাঁহাদের বহু পশ্চাতে।
তারুণ্যের ভরা ভাদরে যদি আমার গান জোয়ার আনিয়া থাকে, তাহা আমার অগোচরে।
যে চাঁদ সাগরে জোয়ার আনে সে হয়ত তাহার শক্তি সম্পর্কে আজও না ওয়াকিফ।
বার্ধক্যকে সবসময় বয়সের ফ্রেমে বেঁধে রাখা যায় না।
বহু ‍যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি।
আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি- যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যর মতো প্রদীপ্ত যৌবন।
যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়াইয়া পড়িয়া থাকে তাহাই বার্ধক্য।
বনের পাখির মত স্বভাব আমার গান করার।
তাহার হাসিতে গান, তাহার কান্নায় গান।
 
শব্দার্থ ও টীকা
রুধির ধারা- রক্ত প্রবাহ
বায়স- কাক
চঞ্চু- ঠোঁট
দৈব- আকস্মিক
পরিক্রমণ- পরিভ্রমণ, প্রদক্ষিণ
না ওয়াকিফ- অজ্ঞাত
কমবক্তা- মিতভাষী
বক্তিয়ার খিলজি- আফগান সেনানায়ক, ইনি মাত্র ১৭ জন সৈন্য নিয়ে অতর্কিত নদীয়া আক্রমণ করলে লক্ষণ সেন ভয়ে পলায়ন করেন।
লক্ষণ সেন- বাংলার শেষ সেন রাজা। বক্তিয়ার খিলজি অতর্কিতে সেন রাজধানী নদীয়া আক্রমণ করলে তিনি পেছনের দরজা দিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যান।
অভিভূত- ভাবাবেগে বিহ্বল, ভাবাবিষ্ট
জবাকুসুমসঙ্কাশ- জবাফুলের মতো
তিমিরবিদারী- অন্ধকার বিদীর্ণ করে যা
তিমিরকুন্তলা- অন্ধকার যার চুল, রাত্রি
নাভিশ্বাস- মৃত্যুকালীন শ্বাসকষ্ট
অগ্নিমান্দ্য- অজীর্ণতা, ক্ষুধামান্দ্য
জীর্ণাবরণ- জরাজীর্ণ আচ্ছাদন
মার্তণ্ডপ্রায়- সূর্যর মতো
কালাপাহাড়- ব্রাহ্মণ থেকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া বিখ্যাত যোদ্ধা। সুলেমান ও দায়ূদ কররানির সেনাপতি। অন্য নাম রাজু।
কামাল পাশা- আধুনিক তুরস্কের জনক।
মুসোলিনি- বেনিতো মুসোলিনি। ইতালির একনায়ক, ফ্যাসিবাদী দলের নেতা। একনায়ক হলেও তিনি ছিলেন উগ্রভাবে দেশপ্রেমিক। হিটলারের মতোই তিনিও চেয়েছিলেন ইতালিকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করতে।
সানইয়াত- সানইয়াত সেন। চিনের জনক ও জনপ্রিয় বিপ্লবী রাজনীতিবিদ।
লেনিন- ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানোফ। পরে বিপ্লবের সময় তিনি লেনিন ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লব সফল হয়, রুশ সম্রাট ‘জার’-এর রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। পৃথিবীর প্রথম  সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় রাশিয়া। তিনিই প্রথম সফল মার্কসবাদী বিপ্লবী।
মুরিদ- শিষ্য
নেয়ামত- অনুগ্রহ
 
লেখক পরিচিতি
জন্ম : ১৮৯৯ সালের ২৫ মে, ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ, পশ্মিবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে
মৃত্যু : ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায়
ছোটবেলায় লেটো গানের দলে যোগ দিয়েছিলেন।
পরে বর্ধমান ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন।
১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচী যান।
লেখায় সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলে তাকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়।
মাত্র ৪৩ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান।
স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
গ্রন্থ-
কাব্যগ্রন্থ- অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, প্রলয়-শিখা, চক্রবাক, সিন্ধু-হিন্দোল
গল্পগ্রন্থ- ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা
উপন্যাস- মৃত্যু-ক্ষুধা
প্রবন্ধগ্রন্থ- যুগ-বাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র-মঙ্গল, রাজবন্দীর জবানবন্দী
 
ভাষা অনুশীলন/ব্যাকরণ অংশ
লিঙ্ক- বিরাম বা যতি বা ছেদ চিহ্ন (সেমিকোলন ও ড্যাশ), সমাস, বানান, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন

  • ‘যৌবনের গান’ কি ধরনের সাহিত্য কর্ম? (গ-২০১০-১১)
  • ‘যৌবনের গান’- এ যাঁর উল্লেখ নেই (ঘ-২০০৫-০৬)
  • ‘তাহার হাসিতে গান, তাহার কান্নায় গান।’ ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধের এই বাক্যে ‘তাহার’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?(ঘ-২০০২-০৩)
  • ‘বহু ‍যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি’- এই উক্তিটি কোন লেখকের? (ঘ-১৯৯৯-৯৮)
  • কোন সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়? (গ-২০০৮-০৯)
  • ‘খোদার দেওয়া এই পৃথিবীতে নেয়ামত হইতে যে নিজেকে বঞ্চিত রাখিল, সে যত মোনাজাতই করুক, খোদা তাহা কবুল করিবেন না।’ এ অংশটুকু কার রচনা থেকে উদ্ধৃত? (গ-২০০৮-০৯)
  • ২০০৭ সনে কাজী নজরুল ইসলামের কততম জন্মদিন পালিত হয়? (গ-২০০৭-০৮)
  • ‘বায়স’ শব্দের অর্থ: (গ-২০০৬-০৭)
  • ‘যৌবনের গান’ রচনাটি প্রকৃতপক্ষে একটি: (গ-২০০৫-০৬)
  • ‘আমাদের পৃথিবী আমরা আমাদের মনের মতো করিয়া গড়িয়া লইব’- এর লেখক: (গ-২০০৪-০৫)
  • বার্ধক্য তাহাই- যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে’- উক্তিটি যে প্রবন্ধের অংশ তার লেখক- (গ-২০০৩-০৪)