প্রারম্ভিক আলোচনা: এই অধ্যায়ের কিছু অংশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

অধ্যায় সারবস্তু:

১. পৌষ্টিক নালী মুখ হতে পায়ু পর্যন্ত ৮-১০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

২. গাল. দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা, তালু, এসব মুখবিবরে অবস্থিত।

৩. মুখবিবরে তিন জোড়া লালা গ্রন্থি থাকে।

ক. নিচের চোয়ালের পাশে সাব-ম্যাক্সিলারি

খ. জিহ্বার নিচে সাব-লিঙ্গুয়াল

গ. কানের নিচে প্যারোটিড গ্রন্থি

৪. প্রাপ্ত বয়ষ্কের চোয়ালের দন্ত কোটরে ১৬ টি দাঁত থাকে:

- ৪ টি কর্তন

- ১ টি করে মোট ২ টি ছেদন

- ২ টি করে মোট ৪ টি অগ্রপেষণ

- ৩ টি করে মোট ৬ টি পেষণ

(মনে রাখার জন্য প্রত্যেকে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে মনে রাখতে পারে। সামনের চারটা দাঁতের দু’পাশে চোখা করে একটা দাঁত থাকে, তা হল ছেদন, তারপর ২ টা দাঁত থাকে, যে দাঁত গুলো কর্তন ও ছেদন দাঁত গুলো থেকে মোটা, পেছন দিকে প্রবৃদ্ধি আছে, এরা অগ্রপেষণ। আর এর পরের ৩ টি দাঁত একটু মোটা করে যেন দু’টো দাঁত জোড়া লেগে একটি হয়েছে, তা হল পেষণ।)

৫. লালাগ্রন্থি নিঃসৃত মিউসিন কোন এনজাইম না। এটি খাদ্যকে পিচ্ছিল করে। তবে টায়ালিন ও মল্টেজ এনজাইম খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।

৬. গলবিল ১০ সেমি। অন্ননালী ২৫ সেমি।

৭. পাকস্থলী ২৫ সেমি লম্বা, ১৫ সেমি চওড়া।

৮. পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশ

- যে অংশে অন্ননাল উন্মুক্ত হয় তা “কার্ডিয়া” (কার্ডিয়াক মানে হৃদপিণ্ড, এই অংশটা হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি)

- কার্ডিয়ার বাঁ পাশে পাকস্থলী প্রাচীর যে গম্বুজাকার ধারণ করে, ফানডাস। (অনেকটা ফাঙ্গাস-এর ব্যাঙের ছাতার মত)

- যে অংশ ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয় = পাইলোরাস। (পাইল মানে গেট, পাইলোরাস শব্দের গ্রিক অর্থ “গেট পাহারাদার)

৯. পূর্ণাঙ্গ মানবদেহে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি আছে।

১০. প্রতিদিন প্রায় ২ লিটার গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয়।

১১. পাকস্থলীতে আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাক শুরু হয়। কার্বোহাইড্রেট হয় না।

১২. ক্ষুদ্রান্ত্র ৬-৭ মিটার লম্বা। (নামে ক্ষুদ্র হলেও এটিই সবচেয়ে লম্বা, পুরো পাকস্থলী ৮-১০ মিটার, সেখানে ক্ষুদ্রান্ত্র একাই এত লম্বা!)

১৩. ক্ষুদ্রান্ত্রের তিনটি অংশ রয়েছে:

- ডিওডেনাম = U আকৃতির, ২৫-৩০ সেমি লম্বা,

- জেজুনাম = ২.৫ মিটার লম্বা, দুই-পঞ্চমাংশ।

- ইলিয়াম = তিন-পঞ্চমাংশ গঠন করে, প্রায় ৩.৫ মিটার।

১৪. বৃহদান্ত্র ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা। এরও তিনটি অংশ:

- সিকাম = এর থেকেই অ্যাপেনডিক্স উদ্ভূত।

- কোলনের তিনটি অংশ: উর্ধ্বগামী কোলন, অনুপ্রস্থ কোলন, নিম্নগামী কোলন। এরপর সিগ্‌ময়েড কোলন অংশটি রয়েছে।

- মলাশয়

১৫. পৌষ্টিক গ্রন্থিতে নির্দিষ্ট তিনটি গ্রন্থি হল: লালাগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় ও যকৃত।

১৬. লালাগ্রন্থির সেরাস কোষ থেকে এনজাইম বের হয়। টায়ালিন সিদ্ধ শ্বেতসারকে আইসোমলটোজ ও মলটোজ-এ পরিণত করে এবং মলটেজ মলটোজ (দুইটি গ্লুকোজ মিলে ডাইকার্বোহাইড্রেড) থেকে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে।

১৭. অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিগুলো থেকে ছোট ছোট নালিকা বেরিয়ে একত্রিত হয়ে উইরসাং নালী গঠন করে। এ নালী ডিওডেনামের কাছে পিত্তনালীর সাথে মিলিত হয়ে ভ্যাটার এর অ্যাম্পুলার মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে।

১৮. অগ্ন্যাশয় একাধারে বহিঃক্ষরা এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। অগ্ন্যাশয়ে আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্‌স থাকে, যা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে।

১৯. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি রূপে এটি অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণ করে, এতে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য (কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন, লিপিড) পরিপাকের এনজাইম থাকে।

২০. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি রূপে আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস হতে ইনসুলিন, গ্লুকাগন, গ্যাস্ট্রিন ও সোমাটোস্ট্যাটিন হরমোন ক্ষরণ করে।

২১. যকৃত দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষে এর ভর ১.৫০-২.০০ কেজি।

২২. চারটি অসম্পূর্ণ খণ্ড নিয়ে যকৃত গঠিত: ডাম, বাঁ, কোয়াড্রেট ও কডেট। ডান খণ্ডটি সবচেয়ে বড়।

২৩. যকৃত পিত্ত ক্ষরণ করে পিত্তাশয়ে জমা রাখে ও স্নেহ জাতীয় পদার্থের শোষণে সাহায্য করে। (পিত্তাশয়ে কিন্তু পিত্তরস উৎপন্ন হয় না, যকৃত থেকে উৎপন্ন হয়!)

২৪. পাকস্থলীয় গ্রন্থিতে থাকে কার্ডিয়াক কোষ,জি-কোষ, মিউকাস কোষ, প্যারাইটাল কোষ ইত্যাদি। এসব কোষ হতে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয়।

২৫. প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের সময় ৫০০-১০০০ মিলিলিটার গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরিত হয়।

২৬. ক্ষুদ্রান্তে থাকে গবলেট কোষ, প্যানেথ কোষ, লিবারকুহন-এর গ্রন্থি, আরজেন্টফিন কোষ এবং ব্রুনার এর গ্রন্থি।

২৭. বিভিন্ন কার্বোহাইড্রেট-এর উৎস:

ক) ল্যাকটোজ = দুধ

খ) মলটোজ = বার্লি (অনেকটা গমের মত)

গ) সুক্রোজ (চিনি) = ইক্ষু

২৮. কার্বোহাইড্রেট পরিপাককারী এনজাইম:
লালারসে = টায়ালিন ও মলটেজ

পাকস্থলীরসে = নেই

অগ্ন্যাশয় রসে = আইসোমলটেজ ও মলটেজ

আন্ত্রিক রসে = অ্যামাইলেজ, মলটেজ, সুক্রেজ, ল্যাকটেজ, ইত্যাদি।

২৯. বিভিন্ন ডাইকার্বোহাইড্রেট:
ল্যাকটোজ = গ্লুকোজ + গ্যালাকটোজ

সুক্রোজ = গ্লুকোজ + ফ্রুক্টোজ

মলটোজ = গ্লুকোজ + গ্লুকোজ

৩০. প্রোটিন পরিপাককারী এনজাইম:

পাকস্থলী রসে = নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেন ও জিলেটিনেজ

অগ্ন্যাশয় রস = নিষ্ক্রিয় ট্রিপসিনোজেন, কার্বোক্সিপেপটিডেজ A ও B, ইলাস্টেজ, কোলাজিনেজ

আন্ত্রিক রস = অ্যামাইনো পেপটাইডেজ, ট্রাইপেপটাইডেজ, প্রোলিডেজ

৩১. পাকস্থলীর HCl এর সংস্পর্শে এসে পেপসিনোজেন সক্রিয় পেপসিন-এ পরিণত হয়।

৩২. ট্রিপসিনোজেন এন্টারোকাইনেজ দ্বারা আর্দ্রবিশ্লিষ্ট হয়ে সক্রিয় ট্রিপসিন-এ পরিণত হয়।

৩৩. এই ট্রিপসিন পরবর্তীতৈ কাইমোট্রিপসিনোজেন, প্রো-ইলাস্টেজ, প্রো-কার্বোক্সিপেপটাইডেজ কে সক্রিয় করে।

৩৪. লিপিড পরিপাককারী এনজাইম:

পাকস্থলীরসে = লাইপেজ বা ট্রাইবিউটারেজ

অগ্ন্যাশয়রসে = লাইপেজ, ফসফোলাইপেজ ও কোলেস্টেরল এস্টারেজ

আন্ত্রিক রসে = আন্ত্রিক লাইপেজ, মনোগ্লিসারিডেজ, লেসিথিনেজ

৩৫. অম্লধর্মী পরিবেশে লাইপেজ তেমন কাজ করতে পারে না। তবে শিশুর পাকস্থলীতে অম্লতা বেশি না হওয়ায় এটি কাজ করে।

৩৬. গ্লুকোজ, গ্যালাকটোজ, অ্যামাইনো এসিড, ইত্যাদির সক্রিয় পরিশোষণ ঘটে। ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল লসিকাতন্ত্রের মাধ্যমে পরিশোষিত হয়।

৩৭. লিপিডদ্রাব্য ভিটামিন A, D, E । আর পানিদ্রাব্য ভিটামিন B-কমপ্লেক্স এবং C ।

৩৮. আত্তীকরণ হল অ্যামাইনো এসিড, গ্লকোজ, এমন সরল একক থেকে কোষের প্রয়োজনে জটিল উপাদান তথা প্রোটোপ্লাজমে পরিণত কর। এটি হল পরিপাকের বিপরীত। (একটা ঘর ভেঙ্গে যে ইট পাওয়া যায়, ওই ইট কাজে লাগিয়ে নতুন ঘর বানানোর সাথে ব্যাপারটা তুলনা করা যায়।)